রেইনকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ২০২২

রেইনকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: রেইনকোট গল্পটি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের রচিত একটি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক গল্প। রেইনকোট গল্পের মূল পটভূমি হলো মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকার অবস্থা নিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় কিরকম আতঙ্কজনক পরিবেশ ছিল মানুষ কিরকম ভয়ে ভয়ে দিন পার করছিল এ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

পাকিস্তানি বাহিনী দের নির্যাতনের প্রতিবাদের জন্য বাঙালিরা তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে ঝাঁপিয়ে পড়ে, শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা নানাভাবে এ দেশের মানুষদের নির্যাতন করে। এই সময় ঢাকার অবস্থা কিরকম ছিল তাই এই রেইনকোট গল্পের আলোচ্য বিষয়।

রেইনকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর 

রেইনকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
রেইনকোট গল্পের কথক এর নাম হচ্ছে নুরুল হুদা। রেইনকোট গল্পের বহুনির্বাচনী প্রশ্ন পড়ার পরে রেইনকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন গুলো পড়লে অনেক ভালো হবে। তাই প্রথমে রেইনকোট গল্পের বহুনির্বাচনী প্রশ্ন গুলো পড়ে তারপর রেইনকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন গুলো পড়বেন।

সৃজনশীল প্রশ্ন ১: কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে এক রাতের জন্য আশ্রয় দিয়েছিল রহমত। ভুল করে একজন মুক্তিযোদ্ধা একটি শার্ট ফেলে গেলে | দিনমজুর রহমত শাটটি গায়ে দিয়ে মাঠে কাজ করতে যায়। হঠাৎ সে নিজের ভেতর এক ধরনের উত্তেজনা অনুভব করে। সেদিন বাড়ি না ফিরে সে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার জন্য সীমান্ত পাড়ি দেয় ।

ক. নুরুল হুদার শ্যালকের নাম কী?

খ. "আব্বু তা হলে মুক্তিবাহিনী'— কে, কেন বলেছে?

গ. উদ্দীপকে 'রেইনকোট' গল্পের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? আলোচনা করো।

ঘ. 'মুক্তিযোদ্ধার শার্ট কিংবা রেইনকোটও কাউকে বদলে দিতে পারে'— উদ্দীপক ও 'রেইনকোট’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. নুরুল হুদার শ্যালকের নাম মিন্টু।

খ. নূরুল হুদা বৃষ্টিতে বাইরে যাওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধা শ্যালক মিন্টুর রেইনকোট পরায় তাঁর পাঁচ বছর ছেলে এ উক্তিটি করেছে। 

কলেজের প্রিন্সিপাল পিওন ইসহাককে দিয়ে নুরুল হুদাকে তলব করলেন কলেজে যাওয়ার জন্য। বাইরে বৃষ্টি হওয়ায় তাঁর স্ত্রী তাঁকে মিন্টুর রেইনকোটটি পরে যেতে বলে। রেইনকোট গায়ে দেওয়ার পর নুরুল হুদার ও পাঁচ বছরের ছেলে তাঁকে দেখে বলে, আব্বু তাহলে মুক্তিবাহিনী। মুক্তিযোদ্ধা শ্যালক মিন্টুর রেইনকোট গায়ে দেওয়ার জন্যেই তাঁর ছেলে আলোচ্য উক্তিটি করেছে।

গ. 'রেইনকোট' গল্পে মুক্তিযোদ্ধার রেইনকোট পরে একজন সাধারণ মানুষের মধ্যে যে উষ্ণতা, সাহস ও দেশপ্রেম সঞ্চারিত হয়েছে সে দিকটি উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।

‘রেইনকোট’ গল্পের নুরুল হুদা একজন শিক্ষক। তিনি ভীরু, পূর্বলচিত্ত ও পলায়নপর মানুষ। এক বাদলা দিনের সকালে কলেজের মিলিটারি ক্যাম্পে যাওয়ার সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট পরেন। এই রেইনকোটের স্পর্শ তাঁকে সাহসী করে তোলে। তিনি দৃঢ়চিত্র এবং সাহসী হয়ে ওঠেন। তিনি মানসিকভাবে মুক্তিযোদ্ধায় পরিণত হন।

উদ্দীপকে দেখা যায়, রহমত নামের এক দিনমজুরের কাছে এক রাতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আশ্রয় নেয়। একজন মুক্তিযোদ্ধা ভুলে একটি শার্ট ফেলে গেলে রহমত সেটি পায়ে দেয়। শাটটি গায়ে দেওয়ার পর তার শরীরে এক ধরনের উত্তেজনার সঞ্চার হয় এবং সে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। উদ্দীপক ও গল্প উভয়ক্ষেত্রেই অনুঘটকের প্রভাবে চেতনার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে। সুতরাং বলা যায়, গল্পের চেতনার পরিবর্তনের দিকটি উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. 'রেইনকোট' গল্পে রেইনকোট এবং উদ্দীপকের মুক্তিযোদ্ধার শার্ট চেতনা জাগ্রত করণে প্রভাবক হিসেবে কাজ করে।

আলোচ্য গন্ধে নুরুল হুদা মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট পরার পর ক্রমশ সাহসী ও দৃঢ়চিত হয়ে ওঠেন। তিনি মানসিকভাবে মুক্তিযোদ্ধায় পরিণত হন। একজন মুক্তিযোদ্ধার পোশাকের স্পর্শে তাঁর মধ্যে দেশপ্রেম সঞ্চারিত হয়। সাধারণ ভীতু প্রকৃতির নূরুল হুদার চেতনার পরিবর্তন হয়ে যায়। তাই মিলিটারির চরম অত্যাচার ও তাঁর কাছে উৎপাত বলে মনে হয।

উদ্দীপকের রহমত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। তাদের একজনের ফেলে যাওয়া শাট গায়ে দেওয়ার পর তার মধ্যে দেশপ্রেমের চেতনা জাগ্রত হয়। দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত হয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার জন্য সীমান্ত পাড়ি নেন। মুক্তিযোদ্ধার শার্ট তার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত করার ক্ষেত্রে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে। যেমনটি আমরা আলোচ্য গঞ্জের নূরুল হুদার মধ্যেও লক্ষ করি।

উদ্দীপকের রহমত ও 'রেইনকোট' গঞ্জের নুরুল হুদা উভয়ের নিকট যথাক্রমে “শার্ট ও 'রেইনকোট' চেতনা পরিবর্তনের প্রেরণারূপে দেখা দিয়েছে। শ্যালক মিন্টুর রেইনকোট পরে যেমন নুরুল হুদার মানসিকতার পরিবর্তন হয়, তেমনি মুক্তিযোদ্দার শার্ট পরে রহমতের মানসিকতার পরিবর্তন দেখা যায়।। নূরুল হুদা রেইনকোট পরার পর মিলিটারির অত্যাচার তাঁর কাছে রেইনকোটের ওপর বৃষ্টি পড়ার মতো অগ্রাহ্য বিষয় বলে মনে হয়। এই যে সাহসী ও দৃঢ়চেতা মনোভাব তাঁর মধ্যে পূর্বে দেখা যায়নি। উদ্দীপকের রহমতও মুক্তিযোদ্ধার শার্ট পরার পূর্বে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়নি। শার্ট গায়ে দেওয়ার পরই তার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার সংকল্প দৃঢ় হয়। উদ্দীপক ও পরে মানসিকতার এ ইতিবাচক পরিবর্তনে মুক্তিযোদ্ধার শাট ও রেইনকোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাই আলোচ্য উক্তিটিকে যথাযথ বলা যায়।

সৃজনশীল প্রশ্ন ২: রাজাকার অলির ছেলে বাসার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে খুব সামান্যই জানে। তার ধারণা, যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা ঠিক কাজ করেছিল। একদিন সে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুর ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রটি দেখে। চলচ্চিত্রটিতে হানাদার বাহিনীর বর্বরতা দেখে সে বিস্মিত হয়ে যায়। ফলে তার চেতনায় আসে পরিবর্তন। এখন সে রাজাকারদের ঘৃণা করে।

ক. ‘রেইনকোট' গল্পটির রচয়িতা কে? ১

খ. “ক্যাপটেনের এদিকে তাকে ঠেলা মুশকিল”— কথাটি কেন বলা হয়েছে?

গ. ‘রেইনকোট’ গল্পের মূলভাবের সঙ্গে উদ্দীপকের মূলভাবের তুলনা করো।

ঘ. “বাসারের কাছে ‘গেরিলা' যেমন, নুরুল হুদার কাছে মিন্টুর রেইনেকোট তেমন” – উক্তিটির যথার্থতা যাচাই করো। 

২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক 'রেইনকোট' গল্পটির রচয়িতা আখতারুজ্জামান ইলিয়াস।

খ. ইসহাক মিয়ার ক্ষমতার দাপট বোঝাতে আলোচ্য কথাটি বলা হয়েছে। ইসহাক মিয়া কলেজের প্রিনসিপালের পিওন। অথচ কলেজে পাকিস্তানি মিলিটারির ক্যাম্প করার পর থেকে এই পিওনের ভয়েই সবাই অস্থির। কেননা সে মিলিটারিদের আস্থাভাজন হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। কথায় কথায় উর্দু বলে। মিলিটারি কর্নেল কলেজে আসার পর থেকে ইসহাক মিয়ার ক্ষমতাও যেন কর্নেলের সমান হয়ে যায়। অতটুকু না হলেও ক্যাপ্টেন পদের নিচে তাকে কোনোভাবেই ভাবা যায় না। এতটাই তার প্রভাব।

গ. 'রেইনকোট' গল্পের মূলভাব— একজন ভীরু ও দুর্বলচিত্ত মানুষের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবন।

‘রেইনকোট' গল্পের নুরুল হুদা ছিলেন ঢাকা কলেজে রসায়নের শিক্ষক। তিনি ভীরু, দুর্বলচিত্ত ও পলায়নপর মানুষ। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি একাধিকবার বাসা পরিবর্তন করেন। এক বাদলা দিনের সকালে কলেজের মিলিটারি ক্যাম্পে যাওয়ার সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট পরেন। এই রেইনকোটের স্পর্শ তাঁকে সাহসী করে তোলে। তিনি দৃঢ়চিত্ত হয়ে ওঠেন এবং মানসিকভাবে মুক্তিযোদ্ধায় পরিণত হন। ফলে মিলিটারির অত্যাচার তাঁর কাছে নিছক উৎপাত বলে মনে হয়।

উদ্দীপকের বাসার রাজাকার অলির বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া সন্তান। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেও বাসারের চেতনায় একসময় পিতার ধ্যান-ধারণা বর্তমান ছিল। সে মনে করত, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধীরা ঠিক কাজ করেছে। কিন্তু একদিন সে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চুর ‘গেরিলা' চলচ্চিত্রটি দেখে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বর্বরতায় বিস্মিত হয়। চলচ্চিত্রটি তার চেতনায় পরিবর্তন নিয়ে আসে। ফলে সে নিজের ভুল বুঝতে পারে এবং রাজাকারদের ঘৃণা করতে শুরু করে। অর্থাৎ, ‘রেইনকোট’ গল্প ও উদ্দীপক উভয়ক্ষেত্রেই অনুঘটকের প্রভাবে চেতনার ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষণীয়।

ঘ. 'রেইনকোট' গল্পে নুরুল হুদার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রতকরণে মিন্টুর রেইনকোটটি অনুঘটকের কাজ করে।

আলোচ্য গল্পের নুরুল হুদা মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট পরার পর ক্রমশ দৃঢ়চিত্ত ও সাহসী হয়ে ওঠেন। তিনি মানসিকভাবে মুক্তিযোদ্ধায় পরিণত হন। একজন মুক্তিযোদ্ধার পোশাকের স্পর্শ ভীরু ও পলায়নপর নুরুল হুদাকে সাহসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করে তোলে। ফলে মিলিটারির অত্যাচার তাঁর কাছে রেইনকোটের ওপর বৃষ্টি পড়ার মতো অগ্রাহ্য বিষয়ব লে মনে হয়।

উদ্দীপকের রাজাকারপুত্র বাসার একসময় পিতার ধ্যান-ধারণা দ্বারা চালিত হতো। সে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের কর্মকাণ্ড সমর্থন করত। কিন্তু ‘গেরিলা' চলচ্চিত্রটি দেখার পর তার চেতনায় পরিবর্তন আসে। চলচ্চিত্রটি তার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রতকরণে অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে। সে রাজাকারদের ঘৃণাক করতে শুরু করে।

উদ্দীপকের বাসার ও ‘রেইনকোট' গল্পের নুরুল হুদা উভয়ের নিকট যথাক্রমে ‘গেরিলা’ ও রেইনকোট চেতনা পরিবর্তনের প্রেরণারূপে দেখা দিয়েছে। মিন্টুর রেইনকোট পরে যেমন নুরুল হুদার মানসিকতার পরিবর্তন হয়, তেমনি চলচ্চিত্র ‘গেরিলা' দেখার পর বাসারের মানসিকতায়ও ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা দেয়। তাই বলা যায়, “বাসারের কাছে ‘গেরিলা’ যেমন, নুরুল হুদার কাছে মিন্টুর রেইনেকোট তেমন” উক্তিটি যথার্থ ।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৩: রাস্তার এদিকের এলাকায় গলির মধ্যে কারফিউ। ট্যাক্সিতে ড্রাইভার ছাড়া আরও তিনজন শিখ- এদের সাথে না নিয়ে দেড় টাকার পথ পনেরো টাকায় আসতেও ট্যাক্সিটা রাজি হয়নি। দোষ দেবে কে? মৃত্যুর আতঙ্কে থমথম করছে চারিদিক, প্রতিটি ইন্দ্রিয় দিয়ে তা অনুভব করা যায়। জীবনের মূল্য দিয়ে কে দয়াদস্ত করবে? গুমটে ঘেমে ঘেমে প্রমথের শরীর ভিজে গিয়েছিল।

ক. বর্ষাকালেই তো জুৎ– একথাটি কে বলেছিল?

খ. মিলিটারির মতো দেখা নিরাপদ নয়া -কেন তা বুঝিয়ে বলো।  

গ. উদ্দীপকের 'প্রমথ' চরিত্রের সাথে 'রেইনকোট' গঞ্জের সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্রটির মিল ব্যাখ্যা করো। 

ঘ. উদ্দীপকে 'রেইনকোট' গল্পের যে চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে তা বিশ্লেষণ করো।


৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. 'বর্ষাকালেই তো জুৎ'- এ কথাটি বলেছিল একজন কুলিবেশী মুক্তিযোদ্ধা।

খ. মিন্টুর রেইনকোট পরার পর নিজেকে একটু ভিন্ন রকম মনে হওয়ায় নরুল হুদা নিজে নিজেই ভাবছিল, তাকে হয়তো অন্যদের চোখে মিলিটারির লোক মনে হচ্ছে।

বাসা থেকে বৃষ্টির মধ্যে বের হতে দেখে নূরুল হুদার স্ত্রী তার ছোটো ভাই মিন্টুর রেইনকোট পরে বের হতে বললে তিনি সেটা পরেই বের হন। রাস্তায় রেইনকোট পরা অবস্থায় নিজেকে ভিন্ন মানুষ বলে মনে হয় নুরুল হুদার। তিনি ভাবতে থাকেন, তাকে দেখে লোকজন হয়তো কোনো বাহিনীর লোক ভাবছে; বিশেষ করে মিলিটারি বাহিনীর। এ প্রসঙ্গেই উক্তিটি করা হয়েছে।

গ. উদ্দীপকের ‘প্রমথ' চরিত্রের সাথে 'রেইনকোট' গল্পের সাদৃশ্যপূর্ণ চরিত্রটি হলো নুরুল হুদা চরিত্র।

নুরুল হুদা 'রেইনকোট' গল্পের কথক। তিনি নির্ঝঞ্ঝাট জীবন পছন্দ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষেও বলেন না আবার বিপক্ষেও বলেন না। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঝামেলা এড়ানোর জন্য বার বার বাসা পরিবর্তন করেন। কলেজে কোনো কোনো শিক্ষক মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা নিয়ে -আলোচনা করলে তিনি সেখান থেকে উঠে যান।

উদ্দীপকে প্রমথ রাস্তায় বের হয়ে দেখে তিন জন শিখকে নিয়ে ট্যাক্সি চালিয়ে যাচ্ছে ড্রাইভার। রাস্তাঘাটে কারফিউ থাকায় লোকজন চলাচল নেই। থমথমে পরিবেশে প্রথম এমনভাবে থাকে যেন তার কিছুই করার নেই। ‘রেইনকোট' গল্পের প্রফেসর নুরুল হুদার মানসিকতাও ধারায় প্রবাহিত। মিলিটারিদের চোখে সে কোনোমতেই পড়তে চায় না।

ঘ. উদ্দীপকে শুধু মুক্তিযুদ্ধের সময় নুরুল হুদা কর্তৃক প্রিন্সিপ্যালের ডাকে কলেজে যাওয়ার পথে ঘটনাবলি মিল থাকায় বলা যায় যে, উদ্দীপকে “রেইনকোট' গল্পের আংশিক চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে।

'রেইনকোট' গল্পে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন জনজীবনের বিভিন্ন চিত্র ফুটে উঠেছে। মুক্তিবাহিনীর কার্যকলাপ, সুবিধাবাদী লোকের চরিত্র, পাকিস্তানপন্থীদের আচরণ, পাকিস্তানি মিলিটারিদের নির্যাতনসহ অনেক কিছু গল্পে ফুটে উঠলেও উদ্দীপকে সেসব অনুপস্থিত।

উদ্দীপকে দেখা যায়, কারফিউয়ের মধ্যে ট্যাক্সিতে তিনজন শিখকে নিয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে। চারদিকে পরিবেশ থমথমে। প্রায় একই ধরনের দৃশ্য দেখা যায় ‘রেইনকোট' গল্পের নুরুল হুদার বাসভবন থেকে কলেজে যাওয়ার পথের ঘটনাবলিতে। সে সময়ের পরিবেশটাও উদ্দীপকের মতো চরম থমথমে ছিল।

আলোচ্য গল্পে নুরুল হুদার বারবার বাসভবন পাল্টানো, মুক্তিযোদ্ধাদের কর্মকাণ্ডকে সরকার কর্তৃক সন্ত্রাসী তৎপরতা প্রমাণের চেষ্টা, কলেজের প্রিন্সিপাল, পিয়ন ও কোনো কোনো শিক্ষকের পাকবাহিনীর সমর্থনে কথা বলা ইত্যাদি বিষয়গুলো উদ্দীপকে অনুপস্থিত। আলোচনায় দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকে ‘রেইনকোট' গল্পের অনেক কিছুই ফুটে ওঠেনি।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৪: ছেলেটির মনে হয় এ গাঁয়ের এমন দৃশ্য সে কোনোদিন দেখেনি। মানুষগুলো বদলে যাচ্ছে। একদিন সবাই মিলে অবাক হয়ে শোনে গাঁয়ে শান্তি কমিটি হয়েছে। আহাদ মুন্সি চেয়ারম্যান। ছেলেটি বুঝে যায় গাঁয়ের মানুষ দু'ভাগ হয়ে গেছে। এক দল আলির চায়ের দোকানে এসে বসে। নিজেদের মধ্যে কিছু কথা বলতে চায়। অন্য দল আহাদ মুন্সির দলে। মিলিটারি ক্যাম্পের পাশে ঘোরাফেরা করে। আকস্মিকভাবে ও চেঁচিয়ে ওঠে, 'যুদ্ধ, যুদ্ধ! মানুষ যখন দু'ভাগ হয়ে যায় তখন তার মধ্যে দিয়ে যুদ্ধ নামের নদী বইতে থাকে। এখন থেকে ওর নাম যুদ্ধ।

ক. 'রেইনকোট' গল্পের কথক কে?

খ. তুমি বরং মিন্টুর রেইনকোটটা নিয়ে যাও' কেন বলা হয়েছে?

গ. উদ্দীপকের আহাদ মুন্সি 'রেইনকোট' গল্পের কোন চরিত্রের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।

ঘ, “উদ্দীপকের ছেলেটি ‘রেইনকোট' গল্পের মিন্টুদের চেতনাকে ধারণ করেছে"- মন্তব্যটি যাচাই করো।

 ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘রেইনকোট’ গল্পের কথক নূরুল হুদা।

খ. অধ্যক্ষ ড. আফাজ আহমদের তলব পেয়ে প্রফেসর নুরুল হুদা যখন কলেজে যাচ্ছিলেন তখন তার স্ত্রী আসমা মিন্টুর রেইনকোটটা নিয়ে যেতে বলে।

১১৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা কলেজের সামনে গেরিলারা গ্রেনেড চার্জ করে একটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার উড়িয়ে দেয়। এই বিষয়ে জেরা করতে পাকিস্তানি আর্মি অফিসার আসবে বলে কলেজের অধ্যক্ষ সকল প্রফেসর ও লেকচারারকে কলেজে তলব করেন। গল্পের কথক নূরুল হুদা ছিলেন কলেজের রসায়ন বিভাগের ঘটনার দিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি ছিল বলে নুরুল হুদার স্ত্রী আসমা তাকে ছাতার পরিবর্তে শ্যালক মিন্টুর রেইনকোট পরে যেতে বলেন।

গ.  উদ্দীপকের আহাদ মুন্সি 'রেইনকোট' গল্পের প্রিন্সিপ্যাল ড. আফাজ আহমদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

‘রেইনকোট' গল্পের প্রিন্সিপ্যাল ড. আফাজ আহমদ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সমর্থনকারী ব্যক্তি। তিনি সময়ে অসময়ে আল্লাহর দরবারে পাকিস্তানের অখন্ডতার জন্য কান্নাকাটি করেন ও দোয়া দরুদ পড়েন। পাকিস্তানের সমর্থন করে তিনি তাঁর সাব অর্ডিনেটদের গালিগালাজ করেন। তিনি পাকিস্তানি উর্ধ্বতন মহলে স্কুল কলেজ থেকে শহিদ মিনার ধ্বংসের সুপারিশ করেছিলেন। নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তিনি উর্দু শিক্ষক আকবর সাজিদকে তোয়াজ করেন।

উদ্দীপকের আহাদ মুন্সি শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান। যুদ্ধের সময় মিলিটারিদের পক্ষ নিয়ে আহাদ মুন্সি তার গাঁয়ের লোকদের বিরোধিতা করে। অর্থাৎ সে পাকিস্তানি বাহিনীর সমর্থনকারী ছিল। গাঁয়ের মানুষকে বিপন্ন করতে আহাদ মুন্সি মিলিটারিদের সহায়তা করেছিল। আলোচ্য উপন্যাসের প্রিন্সিপ্যাল ড. আফাজ আহমদ এমনই স্বার্থান্বেষী বিশ্বাসঘাতক চরিত্র। মূলত নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিশ্বাসঘাতকতা করে পাকিস্তানের সমর্থন করার সূত্রে উদ্দীপকের আহাদ মুক্তি 'রেইনকোট' গল্পের প্রিন্সিপ্যাল ড. আফাজ আহমদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. দেশপ্রেমের দরূণ যুদ্ধ চেতনায় উদ্ভাসিত চরিত্র উদ্দীপকের ছেলেটি 'রেইনকোট' গল্পের মিন্টুদের চেতনাকে ধারণ করেছে।

'রেইনকোট' গল্পের গল্পকথক নূরুল হুদার শ্যালক মিন্টু। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনবাহিনী বাঙালির জীবনকে নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞে বিপন্ন করলে দেশপ্রেম ও মুক্তিকামী চেতনায় জেগে ওঠে মিন্টুসহ আরো সব মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা আক্রমণে তারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে হটিয়ে দেয়।

উদ্দীপকের ছেলেটি গাঁয়ের স্বাভাবিক দৃশ্য বদলে যেতে দেখে। সে দেখতে পায় যুদ্ধ তার গাঁয়ের মানুষগুলোকে দুটো দলে ভাগ করে দিল। এক দলকে সে মিলিটারিদের সাথে আঁতাত করতে দেখে। এইসব দেখে তার মধ্যে জাগ্রত হয় যুদ্ধ চেতনা। যুদ্ধ চেতনাকে বহন করে ছেলেটি নিজের মধ্যেই যুদ্ধকে অনুভব করে।

'রেইনকোট' গল্পের মিন্টু চেতনায় ধারণ করে আছে দেশপ্রেম। দেশপ্রেমের চেতনায় সে হয়ে উঠেছিল সাহসী মুক্তিযোদ্ধা। তার মতো আরও মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে, রুখে দাঁড়ায়। মিন্টুদের দেশপ্রেমের চেতনা কতটা শাক্তিশালী ছিল যে তা ভীত নুরুল হুদাকেও সাহসী দেশপ্রেমিক করে তোলে। মিন্টুর রেইনকোটের মধ্যদিয়েই সেই দেশপ্রেম নূরুল হুদার কাছে সঞ্চারিত হয়, তাদের চেতনার এমনই গুণ। অর্থাৎ মিন্টুর মধ্যে দেশপ্রেমের দরুণ যে যুদ্ধ চেতনা উদ্ভাসিত হয়েছিল তা উদ্দীপকের ছেলেটির মধ্যেও বর্তমান ছিল। উদ্দীপক ও 'রেইনকোট' গল্পের বিশ্লেষণে বলতে পারি, উদ্দীপকের আ ছেলেটি 'রেইনকোট' গল্পের মিন্টুদের চেতনাকে ধারণ করছে। অর্থাৎ আলোচ্য মন্তব্যটি সঠিক ও যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৫: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে হাটখোলা স্কুল পাকবাহিনীর ক্যাম্পে পরিণত হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক রজত আলি মিলিটারিদের আদর আপ্যায়নে কোনো ত্রুটি রাখেন না। স্কুলের শিক্ষকদের তিনি অকারণে বকাঝকা করেন। পাকবাহিনীকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে, মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন। অধিকাংশ শিক্ষকই তার ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডে বিরক্ত ।

ক. উর্দুর প্রফেসরের নাম কী?

খ. শহরে মিলিটারি নামার পর থেকে নুরুল হুদাকে কতবার বাড়ি পাল্টাতে হয়? কেন? ব্যাখ্যা করো।

গ. উদ্দীপকে ‘রেইনকোট' গল্পের কোন দিকটি উঠে এসেছে? আলোচনা করো।

ঘ. ‘রজত আলির মতো ব্যক্তিদের কারণে বহু মুক্তিযোদ্ধার জীবন হুমকির মুখে পড়েছিল'— উদ্দীপক ও 'রেইনকোট' গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. উর্দুর প্রফেসরের নাম আকবর সাজিদ।

খ. শ্যালক মিন্টুর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের ব্যাপারটি গোপন রাখার উদ্দেশ্যে শহরে মিলিটারি নামার পর নূরুল হুদাকে চারবার বাড়ি পাল্টাতে হয়।

নুরুল হুদার শ্যালক মিন্টুর মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার কথা মিলিটারি বা তাদের দোসরদের কেউ জানতে পারলে তার পরিবারের ওপর বিপদ নেমে আসবে। মিন্টুর অবস্থান জানতে চেয়ে তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হবে। এমনকি মেরেও ফেলতে পারে। তাই মিন্টুর বিষয়টি গোপন রাখতে নূরুল হুদা ও তার স্ত্রী সদা তৎপর ছিলেন। তাই মিন্টুর বিষয়ে কেউ কিছু আঁচ করতে পেরেছে। এমন মনে হলেই নুরুল হুদাকে আতঙ্কের কারণে বাসা পাল্টাতে হয়েছে।

গ. উদ্দীপকে 'রেইনকোট' গল্পে বর্ণিত রাজাকারদের ঘৃণ্য রূপটি ফুটে উঠেছে।

আলোচ্য গল্পে পাকিস্তানি বাহিনীর এদেশীয় দোসর তথা রাজাকারদের পরিচয় পাওয়া যায়। তারা দেশ ও দেশের মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে দেশের শত্রুদের সাথে হাত মিলিয়েছিল। ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানি বাহিনীকে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান, কৌশল ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করত তারা। এ সকল কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বাংলার মানুষের জীবনকে তারা বিপর্যস্ত করেছিল।

উদ্দীপকে রজত আলির ঘৃণ্য রূপ প্রকটিত হয়েছে। রাজাকার রজত আলি মিলিটারিদের আদর আপ্যায়নে নিজেকে নিয়োজিত করে। পাকিস্তানি বাহিনীকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে, মুক্তিসেনাদের ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সহায়তা করত সে। এদিকে, আলোচ্য গল্পের পিয়ন ইসহাক, প্রিন্সিপ্যাল ড. আফাজ আহমদ প্রভৃতি মানুষও পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর রূপে কাজ করেছে। প্রিন্সিপ্যাল বাঙালি হয়েও বাঙালি জাতিসত্তার প্রতীক শহিদ মিনারকে উপড়ে ফেলার পরামর্শ দেয় পাকিস্তানি সেনাদের। রাজাকাররা সুন্দরী মেয়েদের ধরে মিলিটারি ক্যাম্পে পৌঁছে দিয়ে আসে। উদ্দীপকে আলোচ্য গল্পে বর্ণিত এই ঘৃণিত রাজাকারদের কর্মকাণ্ডের দিকটিই উঠে এসেছে।

ঘ.  উদ্দীপক ও 'রেইনকোট' গল্পে রাজাকারদের যে নেতিবাচক ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়, তার আলোকে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ বলে প্রতীয়মান হয়।

আলোচ্য গল্পে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট বিধৃত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে উঠে এসেছে পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর ঘৃণ্য রাজাকারদের কথা, দেশের মানুষ যাদের হৃদয় থেকে ঘৃণা করে। এই রাজাকাররা আমাদের দেশের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করেছিল।

উদ্দীপকে রাজাকার রজত আলির ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডের কথা বর্ণিত হয়েছে। হাটখোলা স্কুল পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্পে পরিণত হলে প্রধান শিক্ষক রজত আলি নিজেকে ঘাতক পাকিস্তানি বাহিনীর সেবায় নিয়োজিত করে। পাকিস্তানি বাহিনীকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে, মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য সরবরাহ করে সে তাদের সহায়তা করত। এদিকে, আলোচ্য গল্পের পিয়ন ইসহাক, প্রিন্সিপ্যাল ড. আফাজ আহমদ ও অন্য রাজাকাররা ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছিল।

“রেইনকোট' গল্পে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির সক্রিয় ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর এদেশীয় দোসর তথা রাজাকাররা পাকিস্তানি বাহিনীকে মুক্তিসেনাদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছে। প্রিন্সিপ্যাল আফাজ আহমদও নানা পরামর্শ ও তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিপক্ষে কাজ করেছিল। উদ্দীপকের রজত আলিও পাকিস্তানি বাহিনীকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করত। এতে মুক্তিসেনাদের অবস্থান জেনে তাদের আক্রমণ করা সহজ হয়ে যেত পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য। তাই বলা যায়, রজত আলি বা আফাজ আহমদের মতো রাজাকারের কারণে বহু মুক্তিযোদ্ধার জীবন হুমকির মুখে পড়েছিল।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৬: বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে অনেক নামের ভিড়ে কায়সার আহমেদ নামটি হারিয়ে গেছে। কিন্তু তার আত্মত্যাগের স্মৃতিকে বুকে লালন করে এখনো গ্রামের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে বটগাছটি। যুদ্ধকালীন এক রৌদ্রোজ্জ্বল দুপুরে এই বটগাছের সাথেই কায়সার আহমেদকে বেঁধে গুলি করেছিল মিলিটারিরা। জ্বালিয়ে দিয়েছিল তার ঘরবাড়ি। তার নব পরিণীতা স্ত্রী এবং বিধবা মায়ের কথা মিলিটারির দোসররা আগেই জানিয়ে এসেছিল মিলিটারি ক্যাম্পে।

ক. আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের রচিত ছোটোগল্প গ্রন্থের সংখ্যা কয়টি?

খ. মনে হচ্ছে যেন বৃষ্টি পড়ছে মিন্টুর রেইনকোটের ওপর। উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মিলিটারির দোসরদের কর্মকাণ্ডের সাথে' রেইনকোট' গল্পের সাদৃশ্য আলোচনা করো। 

ঘ. “প্রেক্ষাপট এক হলেও কায়সার আহমেদ চরিত্রটি ‘রেইনকোট' গল্পের চেতনাকে পরিপূর্ণভাবে ধারণ করেনি”— উক্তিটি মূল্যায়ন করো।

৬ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের রচিত ছোটোগল্প গ্রন্থের সংখ্যা পাঁচটি।

খ. মুক্তিসেনা মিন্টুর রেইনকোটটি পরে ভীতু প্রকৃতির নুরুল হুদার ভেতরে যে চেতনা সঞ্চারিত হয়েছিল, তার নিখুঁত পরিচয় আছে ‘রেইনকোট' গল্পে।

মুক্তিযোদ্ধা শ্যালক মিন্টুর রেইনকোটটি পরার পর থেকেই ভীতু প্রকৃতির নুরুল হুদার মাঝে সঞ্চারিত হয় সাহস ও দেশপ্রেমের এক বিচিত্র অনুভূতি। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নুরুল হুদার সংযোগ থাকায় তাকে চাবুক দিয়ে পিটিয়ে তথ্য বের করার চেষ্টা চালায় পাকিস্তানি সেনারা। কিন্তু রেইনকোটটির কারণে তার মাঝে যে প্রেরণার সৃষ্টি হয়েছিল, তা যেন তার চাবুকের আঘাতকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। নুরুল হুদার কাছে চাবুকের আঘাতের ব্যাপারটি রেইনকোটের ওপর বৃষ্টি পড়ার মতোই স্বাভাবিক লাগছিল।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মিলিটারির দোসরদের কর্মকাণ্ডের সাথে ‘রেইনকোট' গল্পের রাজাকারদের কর্মকাণ্ডের সাদৃশ্য রয়েছে।

‘রেইনকোট' গল্পে মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ঢাকা শহরে পাকিস্তানি মিলিটারিদের আক্রমণ এবং রাজাকারদের সহযোগিতার চিত্র ফুটে উঠেছে। কলেজ প্রিনসিপ্যালসহ অন্য রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে মিলিটারিদের সাহায্য করত। তাদের দেওয়া তথ্য থেকেই পাকিস্তানি মিলিটারিরা বিভিন্ন অভিযান পরিচালিত করত। কোনো বাছবিচার না করেই সাধারণ ও নিরপরাধ মানুষদের অত্যাচার করত। উদ্দীপকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মম অত্যাচার, নির্যাতনের আংশিক চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। একই সাথে ফুটে উঠেছে একজন দেশপ্রেমিকের মহান আত্মত্যাগের স্মৃতি উপলব্ধির কথা। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করার কাজে মিলিটারিদের তথ্য সরবরাহ করে সাহায্য করেছিল মিলিটারির দোসররা। 

উদ্দীপকের এই দোসরদের কর্মকাণ্ডের সাথে সাদৃশ্য রয়েছে 'রেইনকোট' গল্পের রাজাকারদের কর্মকাণ্ডের। আলোচ্য গল্পে রাজাকাররা মিলিটারিদের বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করে উদ্দীপকের দোসরদের ন্যায় কাজ করত।


ঘ. উদ্দীপকে পাকবাহিনীর অত্যাচার নির্যাতনের বিষয়টি ফুটে উঠলেও তা ‘রেইনকোট' গল্পের চেতনাকে পরিপূর্ণভাবে ধারণ করে না। ‘রেইনকোট' গল্পে দেখা যায়, নুরুল হুদা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়েও পাক মিলিটারিদের নির্যাতনের শিকার হন। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে তার ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন । কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট নুরুল হুদার মাঝে সঞ্চারিত করে উষ্ণতা, সাহস ও দেশপ্রেম। 

উদ্দীপকে পাকিস্তানি মিলিটারি কর্তৃক দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা কায়সার আহমেদের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। যুদ্ধকালীন রৌদ্রোজ্জ্বল দুপুরে তাকে যে বটগাছের সাথে বেঁধে হত্যা করা হয়েছিল। সেই বটগাছ আজও তার স্মৃতিকে বুকে লালন করে দাঁড়িয়ে আছে। আলোচ্য গল্পে এমনই এক মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতির প্রতীক রেইনকোট। এই রেইনকোট-ই ভীতু নুরুল হুদার মাঝে জাগিয়ে তুলেছিল সাহস ও দেশপ্রেম। তাই মিলিটারিরা নুরুল হুদাকে নির্যাতন করলেও সে তা উপলব্ধি করতে পারে না।

‘রেইনকোট' গল্পে দেখা যায়, ভীতু নুরুল হুদার চোখের সামনে পাকবাহিনীর সদস্যরা মসজিদে আজানরত অবস্থায় মুয়াজ্জিনকে গুলি করে হত্যা করে, অথচ নুরুল হুদা কিছুই করতে পারেন না। তিনি নির্বাক হয়ে চেয়ে থাকেন। এছাড়াও নুরুল হুদার চিন্তা ও অন্যান্য চরিত্রের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটি সামগ্রিক রূপ ফুটে উঠেছে। একজন মুক্তিযোদ্ধার ব্যবহৃত রেইনকোট কীভাবে একজন ভীরু, দুর্বলচিত্ত শিক্ষক নুরুল হুদাকে সাহসী করে তোলে, সে বিষয়টিও লেখক তুলে ধরেছেন। কিন্তু উদ্দীপকে এসব বিষয় প্রতিফলিত না হয়ে শুধু পাকবাহিনীর আক্রমণের চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। তাই ওপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি- “প্রেক্ষাপট এক হলেও কায়সার আহমেদ চরিত্রটি ‘রেইনকোট' গল্পের চেতনাকে পরিপূর্ণভাবে ধারণ করেনি”- উক্তিটি যথার্থ।

আমাদের শেষ কথা

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচিত রেইনকোট গল্পটি মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত। গল্পটিতে তৎকালীন ঢাকার অবস্থা বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। রেইনকোট গল্পের কথক নুরুল হুদা। রেইনকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারলেন আশা করি উপকৃত হবেন উপকৃত হলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।

Please Share this On:

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url