আমার পথ সৃজনশীল প্রশ্ন | আমার পথ mcq

আমার পথ সৃজনশীল প্রশ্ন | আমার পথ mcq: আমার পথ প্রবন্ধ টি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত বিখ্যাত প্রবন্ধ গ্রন্থ 'রুদ্র-মঙ্গল' থেকে সংকলন করা হয়েছে। আমার পথ প্রবন্ধের কাজী নজরুল ইসলাম এমন এক আমির প্রত্যাশা করেছেন যার পথ সত্যের পথ। যে সত্য প্রকাশে নির্ভয় অসংকোচ। আমরা অনেক সময় সমাজের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কথা চিন্তা করে সত্য প্রকাশ থেকে বিরত হই। সমাজের ভুল দেখলেও তা ধরিয়ে দিতে চাইনা অথবা নিজেই ভুল করলেও তা স্বীকার করতে চায় না। কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমার পথ প্রবন্ধের এই সত্য প্রকাশে সংকোচ কে ভন্ডামি বলেছেন।

আমার পথ প্রবন্ধ কবি বলেছেন ভুল যারই হোক না কেন ভুল থেকে বেরিয়ে এসে ভুল শুধরে নেওয়া একান্ত কাম্য। এই ভুল থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হলে মনুষত্ববোধ জাগ্রত করা সম্ভব।

আমার পথ সৃজনশীল প্রশ্ন গুলো ভালো করে পড়তে হবে। পাশাপাশি আমার পথ mcq ও আমার পথ প্রবন্ধের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন গুলো ভালো করে পড়লে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব। আমার পথ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন ও mcq পড়ার আগে আমার পথ প্রবন্ধ টি প্রথমে ভালোভাবে পড়ে নিতে হবে এবং বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
আমার পথ সৃজনশীল প্রশ্ন | আমার পথ mcq
আমার পথ সৃজনশীল প্রশ্ন | আমার পথ mcq

আমার পথ প্রবন্ধের শব্দার্থ গুলো ভালোভাবে মুখস্ত করলে প্রবন্ধ টির মর্মার্থ বোঝা সম্ভব হবে এজন্য আমার পথ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন পড়ার আগে প্রবন্ধটি এবং আমার পথ প্রবন্ধের শব্দের অর্থ গুলো ভালোভাবে পড়ে নিতে হবে।

আমার প্রবন্ধের mcq ভালোভাবে পড়লে সৃজনশীল প্রশ্ন গুলো সহজ হবে তাই প্রথমে আমার পথ প্রবন্ধের mcq গুলো পড়ে নিতে হবে। আমরা এখন আমার পথ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন দেখব। 

আমার পথ সৃজনশীল প্রশ্ন | আমার পথ mcq


সৃজনশীল প্রশ্ন ১: 
কলম তুমি শুধু বারংবার 
আনত করে ক্লান্ত ঘাড়
গিয়েছ লিখে স্বপ্ন আর পুরোনো কত কথা, 
সহিত্যের দাসত্বের ক্ষুধিত বশ্যতা।

কলম, তুমি নিরপরাধ তবুও গালাগালি 
খেয়েছ আর সয়েছ, কত লেখকদের ঘৃণা,
কলম তুমি চেষ্টা করো দাড়াতে পারো কিনা।

ক. সবচেয়ে বড়ো ধর্ম কী?

খ. এই পরাবলম্বনই আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেললে – লেখক কেন একথা বলেছেন?

গ. উদ্দীপকের 'কলম' ও 'আমার পথ' প্রবন্ধে প্রতিফলিত

চেতনার মধ্যকার বৈসাদৃশ্য দেখাও।

ঘ. “উদ্দীপকের কলমের মতো দাসত্ব, অধীনতা স্বীকার করতে ‘আমার পথ' প্রবন্ধের প্রাবন্ধিক রাজি নন"- মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো।

১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক. মানুষ ধর্মই সবচেয়ে বড়ো ধর্ম।

খ. পরাবলম্বতা মানুষের সঞ্জীবনী শক্তি ও আত্মশক্তি ক্রমান্বয়ে বিনষ্ট করে ফেলে বলে লেখক প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।

নিজের সত্তাকে বিকিয়ে অন্যের গলগ্রহ হয়ে থাকলে মানুষ ধীরে ধীরে অলস ও কর্মবিমুখ হয়ে যায়। এতে তার নিজের ভেতরে যে একটা দুর্ভেদ্য শক্তি আছে তা বাধাপ্রাপ্ত হয়। তখন মানুষ অন্যের দানে, দয়ায় ও দাক্ষিণ্যে বেঁচে থাকে। এভাবে পরাবলম্বন আমাদের দাসত্বের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করে তোলে। এ বিষয়টি বোঝাতেই লেখক প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।

গ. সত্যের পথ থেকে বিচ্যুক্তি তুলে ধরায় উদ্দীপকের কলম ও আমার পথ প্রবন্ধের চেতনার মধ্যকার বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। 

"আমার পথ' প্রবন্যে ব্যক্তিসত্তার চেতনার কথা বলা হয়েছে। সত্যকে আশ্রয় করে যে এগিয়ে যায় সে কখনো কারো সাগত স্বীকার করে না। নিজেকেই সে নিজের কর্ণধার বলে মনে করে। সকল প্রকার লজ্জাকে উপেক্ষা করে সাহসের সাথে সে লক্ষ্যে স্থির থাকে।

উদ্দীপকে কলমের দাসতুকে তুলে ধরা হয়েছে। কলম স্বপ্ন ও অতীত কথা লিখতে গিয়ে অবনমিত থাকে সাহিত্যের দাসতকে স্বীকার করে। নেয়। নিরাপত্তার কলমকেও কখনো কখনো বন্ধু লেখকের ঘৃণা তিরস্কার সহ্য করতে হয়। কিন্তু আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক বলেছেন মানুষের ভেতরে যে ঐশ্বরিক ক্ষমতা আছে তা যদি সে উপলব্ধি করতে পারে তাহলে এই ক্ষমতার বলে তার সামনে কোনো বাধা-বিপত্তি, প্রতিবন্ধকতাকে কিছু মনে হবে না। যে নিজের সত্যকে চিনেছে তাকে কখনো কারো দাসত্ব স্বীকার করতে হয় না। এই চেতনাই উদ্দীপকের সাথে প্রবন্ধের বৈসাদৃশ্য সৃষ্টি করে।


ঘ. "উদ্দীপকের কলমের মতো দাসত্ব, অধীনতা স্বীকার করতে আমার পথ' প্রবন্ধের প্রাবন্ধিত রাজি নন প্রশ্নোত্ত এ মন্তব্যটি যথার্থ বসে প্রতীয়মান হয়।

‘আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক আত্মনির্ভরশীলতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। নিজের সত্যকে নিজের কর্ণধার ভাবলেই আপন শক্তির ওপর অটুট বিশ্বাস আসে। আত্মনির্ভরতা থেকেই আসে স্বাধীনতা— একথাই যেন প্রবন্ধের সারকথা।

উদ্দীপকে কলম কীভাবে দাসত্ব স্বীকার করেছে তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। নিরপরাধ কলমের নিজস্ব চেতনা নেই বলেই সে অন্যের বশ্যতা স্বীকার করে, তাকে তিরস্কার শুনতে হয়। আত্মার নিজস্ব উপলব্ধির অভাবেই অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে নিশ্চল থাকতে হয়।।

"আমার পথ' প্রবন্ধের লেখক পরাবলম্বনকে বলেছেন মানুষের দাসত্ব ও নিষ্ক্রিয়তার কারণ। নিজস্ব শক্তি ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়েই অর্জন করা যায় সফলতা। হীনম্মন্যতাকে দূর করার জন্য আত্মবিশ্বাস অতি জরুরি গুণ। অন্তরের দাসত্ব দূর করে আত্মবিশ্বাসী হয়ে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে চাই সাহসী মনোবল। নিজেকে জানার মধ্য দিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠাই দাসত্ব থেকে মুক্তির একমাত্র উপায়। কিন্তু উদ্দীপকে সেই চেতনার দেখা পাওয়া যায় না বরং দাসত্ব ও বশ্যতা স্বীকার করে নিতে দেখা যায়। তাই একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। উদ্দীপকের কলমের মতো দাসত্ব, অধীনতা স্বীকার করতে 'আমার পথ পরাবহর পাবন্ধিক রাজি নন।

সৃজনশীল প্রশ্ন ২: রমিজ উদ্দিন সারাটি জীবন শিক্ষকতা করেছেন, গড়েছেন আলোকিত মানুষ। অবসর গ্রহণের পর তিনি গড়ে তুলেছেন তারুণ্য নামের সেবা সংগঠন। বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজের পাশাপাশি পথশিশুদের শিক্ষাদান, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করেন তিনি। অনেক কাজের প্রশংসা করেন আবার নিন্দা ও কটূক্তি করতেও ছাড়েন না কেউ কেউ। তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন

মনেরে আজ কহ যে

ভালো মন্দ যাহাই আসুক

সত্যেরে লও সহজে।

ক. ‘আগুনের ঝান্ডা’ শব্দের অর্থ কী?

খ. প্রাবন্ধিক নিজেকে ‘অভিশাপ-রথের সারথি' বলে অভিহিত করেছেন কেন?

গ. উদ্দীপকের রমিজ উদ্দিনের মাধ্যমে ‘আমার পথ' প্রবন্ধের যে বাণী উচ্চারিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশের বক্তব্য চেতনায় ধারণ করে আলোকিত পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব'— ‘আমার পথ' প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর


ক. 'আগুনের ঝান্ডা' শব্দের অর্থ— অগ্নিপতাকা।

খ. সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে অভিশাপ হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন বলেই কবি নিজেকে ‘অভিশাপ-রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন। কবি পুরাতন-জীর্ণ সমাজকে ঢেলে সাজাতে চান। কিন্তু এজন্য কবিকে শত বাধা ও আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে। কবি এ সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তিনি তাদের অন্যায়কে অভিশাপ হয়ে ধ্বংস করতে চান। তাই তিনি নিজেকে ‘অভিশাপ-রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন।

গ. উদ্দীপকে রমিজ উদ্দিনের মাধ্যমে 'আমার পথ' প্রবন্ধের প্রাবন্ধিকের স্বনির্ধারিত জীবন সংকল্পের দিকটি উচ্চারিত হয়েছে।

‘আমার পথ' প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক এমন এক ‘'আমি'র উদ্ভাসন প্রত্যাশা করেছেন, যার পথ নিরেট সত্য পথ; সত্য প্রকাশে যিনি নির্ভীক। স্বনির্ধারিত এই জীবন সংকল্পকে তিনি তাঁর মতো আরও যারা সত্যপথের পথিক হতে আগ্রহী তাদের উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে।

উদ্দীপকের শিক্ষক রমিজ উদ্দিন জীবনে অনেক আলোকিত মানুষ গড়েছেন, সেবামূলক কাজও তিনি অনেক করেছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সেমিনারের মাধ্যমে তিনি মানুষকে সচেতন করে তুলতেও সচেষ্ট । নিন্দা বা প্রশংসার আবর্ত থেকে বেরিয়ে ভালো-মন্দের ঊর্ধ্বে তিনি সত্যকে অবলম্বন করেছেন এবং তরুণদেরও তা অনুসরণের উদ্দীপ্ত আহ্বান জানিয়েছেন। 'আমার পথ' প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলামও প্রতিটি মানুষকে পূর্ণ এক 'আমি'র সীমায় ব্যাপ্ত করতে চেয়েছেন। যেখানে সত্যের উপলব্ধি কবির প্রাণপ্রাচুর্যের উৎসবিন্দু। সমালোচনার ঊর্ধ্বে সত্যের আলোয় নিজেকে চিনে নেওয়ায় কবির এ জীবন-সংকল্পই রমিজ উদ্দিনের আহ্বানে উঠে এসেছে

ঘ. ‘উদ্দীপকের কবিতাংশের বক্তব্য চেতনায় ধারণ করে আলোকিত পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব— 'আমার পথ' প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটি যথার্থ। ‘আমার পথ' প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম মানুষকে পূর্ণ এক 'আমি'র সীমায় ব্যাপ্ত করতে চেয়েছেন, যেখানে সত্যের উপলব্ধিই কবির প্রাণপ্রাচুর্যের উৎসবিন্দু। নজরুল প্রতিটি মানুষকে পূর্ণ এক আমীর সীমায় ব্যাপ্ত করতে চেয়েছেন।

উদ্দীপকের সত্যান্বেষী শিক্ষক রমিজ উদ্দিন কবিতাংশে সত্যকে অবলম্বন করতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি ভালো-মন্দ সকল সমালোচনাকে উপেক্ষা করে মনকে সত্যে অধিষ্ঠিত করতে বলেছেন। কেননা সত্যেই সকল কল্যাণ নিহিত।

‘আমার পথ' প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক সকলকে আপন সত্তায় বিশ্বাসী হতে বলেছেন, যার পথ হবে নিরেট সত্য পথ। সমালোচনা ও লোকভয়কে তুচ্ছ করে আপন সত্য দ্বারা মনুষ্যত্ববোধের জাগরণ ঘটাতে পারলেই সকল বিরোধ ও অসাম্যের ইতি ঘটবে। আলোচ্য উদ্দীপকের কবিতাংশেও একই কথা অনুরণিত হয়েছে। সেখানেও কবির প্রাণপ্রাচুর্যের উৎসবিন্দু সত্যের উপলব্ধির কথাই বলা হয়েছে। যার মাধ্যমে পৃথিবীতে কল্যাণ সাধিত হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৩: সাদেকুল ইসলাম একজন মুক্তিযোদ্ধা। দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি দেশের সমাজকে নতুন করে গড়ে তুলতে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি এর জন্য প্রতিষ্ঠা করেন 'প্রয়াস' নামে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। তিনি জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। পাশাপাশি সমাজের এবং এলাকার নেতাদের ভণ্ডামি দেখলে প্রতিবাদ করতে পিছপা হন না। মুক্তিযোদ্ধা তিনি, তাই মিথ্যাচার, ভণ্ডামি এসবের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠে প্রতিবাদ করেন। ফলে সমাজে তার শত্রুর অভাব নেই। তবুও তিনি সত্য আর ন্যায়ের পথেই থাকেন, কারণ এই পথে সহজে জয় আসবে।

ক. 'কর্ণধার' শব্দটির অর্থ কী?

খ. 'আমি সে-দাসত্ব হতে সম্পূর্ণ মুক্ত'- উক্তিটি ব্যাখ্যা করো ।

 গ. উদ্দীপকটির সাদেকুল ইসলামের সাথে আমার পথ' প্রবন্ধের কোন দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে? নির্ণয় করো। 

ঘ. “উদ্দীপকটি 'আমার পথ' প্রবন্ধের সবটুকুর প্রতিফলন নয়।" ব্যাখ্যা করো।

৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর


ক. ‘কর্ণধার’ শব্দটির অর্থ নেতৃত্ব প্রদানের সামর্থ্য আছে এমন ব্যক্তি।

খ. মিথ্যা বা ভণ্ডামিকে প্রশ্রয় করে, পরাবলম্বনের মতো দাসত্ব থেকে মুক্ত থাকা প্রসঙ্গে কাজী নজরুল ইসলাম আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

'আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক পরাবলম্বনকে সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব বলেছেন। নিজে নিষ্ক্রিয় থেকে অন্য একজন মহাপুরুষকে প্রাণপণে ভক্তি করলেই দেশ উদ্ধার হয়ে যাবে না, নিজের বা জাতির মুক্তি আসবে না। লেখকের মতে, যার অন্তরে গোলামির ভাব সে বাইরের গোলামি থেকে  মুক্তি পায় না। লেখক ভুল করতে রাজি আছেন, কিন্তু ভণ্ডামি করতে প্রস্তুত নন। তিনি বলেছেন, তাঁর এমন কোনো গুরু নেই, যার খাতিরে তিনি কোনো সত্যের আগুন অস্বীকার করে মিথ্যাকে প্রশ্রয় দেবেন। তিনি এ ধরনের দাসত্ব থেকে মুক্ত।

গ. উদ্দীপকটির সাদেকুল ইসলামের সাথে ‘আমার পথ' প্রবন্ধে বর্ণিত আপন সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত হওয়ার দিকটির সাদৃশ্য রয়েছে।

‘আমার পথ' প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক এমন এক 'আমি'র আহ্বান প্রত্যাশা করেছেন, যার পথ সত্যের পথ, সত্য প্রকাশে যিনি নির্ভীক ও অকুতোভয়। রুদ্র তেজে মিথ্যার ভয়কে জয় করে সত্যের আলোয় নিজেকে চিনে নিতে সাহায্য করে নজরুলের প্রত্যাশিত এই ‘আমি’ সত্তা। ‘আমি' সত্তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিজেকে চিনলেই আপন সত্যের পথ উন্মোচিত হয়। আর এই পথই আসল পথ।

উদ্দীপকের সাদেকুল ইসলাম একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি আপন সত্যের আলোয় আলোকিত একজন মানুষ। দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি সমাজসেবামূলক কাজে আত্মনিয়োগ করেন। এ লক্ষ্যে তিনি 'প্রয়াস' নামক একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সেবামূলক কাজের পাশাপাশি অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধেও তিনি প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তার এ ধরনের কর্মকাণ্ডের কারণে সমাজে তার অনেক শত্রু সৃষ্টি হয়। কিন্তু সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তিনি আপন সত্যের পথে অবিচল রয়েছেন। 'আমার পথ' প্রবন্ধেও লেখক আপন সত্যের আলোয় আলোকিত হওয়ার কথা বলেছেন। এ প্রবন্ধে লেখক যে 'আমি' সত্তার কথা বলেছেন তা উদ্দীপকের সাদেকুল ইসলামের মাঝে মূর্ত হয়ে উঠেছে। তাই আপন সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত হওয়ার এ দিকটির সাথে উদ্দীপকের সাদেকুল ইসলামের সাদৃশ্য রয়েছে।


ঘ. উদ্দীপকের আপন সত্য পথে চলার দিকটি তুলে ধরা হলেও তা 'আমার পথ' প্রবন্ধের সমগ্রভাবকে ধারণ করেনি।

সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে মিথ্যা ও নতজানুতার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ ‘আমার পথ' প্রবন্ধের প্রধান দিক। প্রবন্ধে সত্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সত্যের পথে থাকার জন্য 'আমি' সত্তার আহ্বানে সাড়া দেওয়ার কথা বলা হয়েছে প্রবন্ধে। কেননা, লেখকের মতে আপন সত্যের পথই আসল পথ। এই পথে থাকতে গিয়ে- লেখক প্রয়োজনে অবিনয়ী হতেও দ্বিধা করবেন না। এছাড়া আলোচ্য প্রবন্ধের বিষয়বস্তুতে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও পরাবলম্বন থেকে মুক্ত থাকার বিষয় উঠে এসেছে।

উদ্দীপকের সাদেকুল ইসলাম সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত একজন মানুষ। তিনি সর্বদা সত্য ও ন্যায়ের পথকে আঁকড়ে ধরেছেন। মুক্তিযোদ্ধা সাদেকুল ইসলাম দেশ স্বাধীনের পর জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। সমাজে বিদ্যমান অপশক্তি জুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধেও তিনি রুখে দাঁড়িয়েছেন। শত্রুদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে নির্ভীকচিত্তে তিনি আপন সত্যের পথে অবিচল থেকেছেন।

‘আমার পথ' প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম আপন সত্যের পথে চলতে আহ্বান করার পাশাপাশি ধর্মীয় সম্প্রীতির বিষয়টি তুলে ধরেছেন । তিনি বলেছেন মানুষে মানুষে যেখানে প্রাণের মিল, সত্যের মিল, সেখানে ধর্মের বৈষম্য কোনো হিংসার ভাব আনে না। যার নিজের ধর্মের বিশ্বাস আছে, যে নিজের ধর্মকে চিনেছে, সে অন্যের ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না। আবার পরাবলম্বন যে মানুষকে দাসে পরিণত করে, সে বিষয়ে, সতর্ক করেছেন লেখক। এই ধর্মীয় সম্প্রীতির বিষয়টি এবং পরাবলম্বন থেকে মুক্ত থাকার বিষয়টি উদ্দীপকে আলোচিত হয়নি। কাজেই আমরা বলতে পারি, উদ্দীপকটি আমার পথ' প্রবন্ধের সবটুকুর প্রতিফলন নয়— মন্তব্যটি যথার্থ।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৪: 

চিনিলাম আপনারে

আঘাতে আঘাতে

বেদনায় বেদনায়

সত্য যে কঠিন কঠিনেরে ভালোবাসিলাম

সে কখনো করে না বঞ্চনা। 

ক. কোনটি সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব?

খ. 'যার মনে মিথ্যা, সেই মিথ্যাকে ভয় করে'- কেন? গ. উদ্দীপকটিতে 'আমার পথ' প্রবন্ধের যে দিকটিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।

ঘ. উদ্দীপকের উক্ত বিষয়ই ‘আমার পথ' প্রবন্ধের ভিত্তি তৈরি করেছে।” মন্তব্যটির সত্যতা যাচাই করো।


৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর


ক. পরাবলম্বন হচ্ছে সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব।

খ. যে নিজের সত্যকে চিনতে পারে না তার ভেতরে ভয় কাজ করে বলে সে বাইরেও ভয় পায় ।

বাস্তব জীবনে মানুষকে প্রতিনিয়ত নানারকম সত্য মিথ্যার মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু খুব অল্প মানুষই সত্য-মিথ্যার প্রকৃত রূপ চিনতে পারে। যে সত্যকে সঠিকভাবে চিনতে পারে তার অন্তরে মিথ্যার অমূলক ভয় থাকে না । আর যে ব্যক্তি সত্যের আসল রূপটি চিনতে ব্যর্থ হয় তার অন্তরেই মিথ্যার ভয় থাকে। যার মনে মিথ্যা সে-ই মিথ্যার ভয় করে, আর অন্তরে ভয় থাকলে সে ভয় বাইরেও প্রকাশ পায়। এজন্য প্রাবন্ধিক বলেছেন, যার ভেতরে ভয় সে-ই বাইরে ভয় পায়।

গ. উদ্দীপকে ‘আমার পথ' প্রবন্ধের আত্মোপলব্ধি ও আত্মবিশ্বাসের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।

'আমার পথ' প্রবন্ধের লেখক সত্যকে উপলব্ধি করে নিজের অবস্থা বিবেচনা করার কথা বলেছেন। লেখক মনে করেন, যে সত্যকে জেনে এগিয়ে যায় তাকে অন্য কারো ওপর নির্ভর করতে হয় না। তার বিশ্বাসের জোর তাকে সফলতার সন্ধান দেয়।

উদ্দীপকের কবি কঠিন জেনেও সত্যকে গ্রহণ করেছেন। সত্যকে চিনতে হলে ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। সত্য অনেক কঠিন কিন্তু এ কঠিনকে যে জয় করে এগিয়ে যেতে পারে সেই সফল হয়। কারণ সত্য কখনো মানুষকে পথভ্রষ্ট করে না। উদ্দীপকের এ বিষয়টিই 'আমার পথ' প্রবন্ধে আলোচিত হয়েছে। প্রবন্ধে লেখক সত্যকে উপলব্ধি করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি মনে করেন, মিথ্যাকে পরিহার করে যে সত্যকে ধারণ করে সেই জয়ী হয়। আলোচ্য প্রবন্ধের এ দিকটিই উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।

ঘ.  উদ্দীপকের সত্যের প্রতি অবিচল থাকার বিষয়টি আমার পথ' প্রবন্ধের ভিত্তি তৈরি করেছে।

'আমার পথ' প্রবন্ধে আত্মোপলিব্ধর বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। আর এর প্রথম শর্তটি হলো নিজের সত্যকে জানা এবং তা প্রকাশ করা। যথার্থরূপে নিজেকে না জানলে আর সত্যকে প্রকাশ করতে না পারলে পরনির্ভরশীলতা তৈরি হয়। তাই লেখক প্রয়োজনে দাম্ভিক হতে চান। তিনি বিশ্বাস করেন সত্যের দম্ভ যার মধ্যে আছে তার পক্ষেই কেবল অসাধ্য সাধন করা সম্ভব উদ্দীপকেও সত্যের শক্তির ওপর ব্যক্তির নির্ভরতা উপস্থাপিত হয়েছে। যেখানে শত আঘাত-বেদনার মধ্য দিয়েও মানুষ নিজেকে জানে, নিজের সত্যকে আবিষ্কার করে। আর সেই সত্য যত কঠিনই হোক না কেন, তাতেই আত্মার নির্ভরতা।

উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে বলা যায়, উদ্দীপক ও 'আমার পথ' প্রবন্ধ উভয়স্থানে সত্যকেই সঠিক পথ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একমাত্র সত্যই যে ব্যক্তিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে সে বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। আপন সত্যের শক্তিতে বলীয়ান হওয়ার মাধ্যমে আত্মনির্ভরতা অর্জন করা সম্ভব। আর এই আত্মনির্ভরতা অর্জনই উদ্দীপক ও আলোচ্য প্রবন্ধের সারকথা। তাই বলা যায়, আপন সত্যকে আবিষ্কার করে সেই সত্যের বলে বলীয়ান হওয়ার বিষয়টিই উদ্দীপক ও আলোচ্য প্রবন্ধের মূল বিষয়। সুতরাং প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

আমাদের শেষ কথা

আমার পথ প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন ও আমার পথ mcq ভালো ভাবে পড়তে হবে। তার আগে আমার পথ প্রবন্ধ টি ভালো করে পড়তে হবে।

Please Share this On:

Previous Post
1 Comments
  • Shahzalal Hossain
    Shahzalal Hossain 1 May 2022 at 06:24

    Sundor lekha

Add Comment
comment url